Lok Sabha Election 2024: দুর্বল সংগঠন, দলাদলি ও বাম ভোটে আটকে অঙ্ক

Lok Sabha Election 2024: দুর্বল সংগঠন, দলাদলি ও বাম ভোটে আটকে অঙ্ক

ভোটের ফলাফলের বিচারে তৃণমূলের খাসতালুক বর্ধমান-পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র। 2021 বিধানসভায়, রাজ্যের শাসক দল এই লোকসভায় সাতটি আসন পেয়েছিল।

বিজেপির ‘কবিয়াল’ প্রার্থী ভোটের সভায় একটি গান গাইছেন। তিনি ভক্তিরাসের গানে সন্দেশখালি থেকে নিয়োগ দুর্নীতির কথা তুলছেন (তবে সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূলের ‘স্টিং ভিডিও’ এখনও প্রকাশিত হয়নি)। সভায় শুধু দলীয় সমর্থকরাই নয়, পথচারীরাও দাঁড়িয়ে গান শুনছেন। অসীম সরকার মাঝে মাঝে নিজের গানের স্টাইলে ঠাট্টা-তামাশা ছুড়ে দিচ্ছেন। হরিণঘাটার পদ্ম বিধায়ক, যাকে আপাতত বর্ধমান-পূর্ব লোকসভা আসনের জন্য লড়তে হবে।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বড় ঘোষণা, SSC নিয়ে বড় পদক্ষেপ রাজ্য বিজেপির! বেছে নেওয়া হল ৬ জনকে

ভোটের ফলাফলের বিচারে তৃণমূলের খাসতালুক বর্ধমান-পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র। 2021 বিধানসভায়, রাজ্যের শাসক দল এই লোকসভায় সাতটি আসন পেয়েছিল। তাই বিজেপির কবিয়াল-প্রার্থী তার ‘পরিচিত পরিচয়’ ব্যবহার করে অপরিচিত মাঠে খেলছেন। এই লড়াইয়ে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের প্রহর গুনছে গেরুয়া শিবিরও। তার উপরে, কালনা, পূর্বস্থলী, কাটোয়া জুড়ে অসীমের ‘পূর্বাশ্রম’ সম্পর্কে জ্ঞানও যথেষ্ট। তিনি এলাকায় অনেক কবিতা সমাবেশের আয়োজন করেছেন। তখনও বিধায়ক-নেতা হননি। নির্বাচনী প্রচারণার ফাঁকে গণসংযোগে সে সব স্মৃতি উস্কে দিচ্ছেন তিনি। মানুষও তাতে সাড়া দিচ্ছে। এবার সাড়া পাল্টানোর স্বপ্ন দেখছেন অসীম। এই মাঠে পদ্ম ফুটবে বলে আশা করছেন এলাকার বিজেপি নেতারাও।

চাষবাস আশায় বেঁচে থাকে! রাজ্যের সবচেয়ে বড় কৃষি অংশীদার বর্ধমানের এই লড়াইয়ে বিজেপি প্রার্থী বা সমর্থকরা আশা রাখবে না এমন নয়। বিধানসভা ভোটের হিসেব তিনি যেভাবেই বলুন না কেন বা বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা অন্যথা বলে।

আরও পড়ুন:  প্রথম দুই মেয়াদে ভোটের ‘বাস্তব হার’ কত? কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূল!

তবে শুধু আশা নয়, ভয়ও বয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় একান্ত আলাপচারিতায় এ নিয়ে মুখ খুলছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই। তারা বলেন, বংশ বিবাদে কাঁটা রয়েছে। এতে রক্তপাতও হতে পারে। যদি তাই হয়, পাশা উল্টানো অসম্ভব নয়। তৃণমূলের দলাদলির কুফল অবশ্য নতুন নয়। ভোটের আগে মলম দিয়ে দুর্গ সিল করার উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এবার তা ছড়িয়ে পড়েছে বহুদূর। রায়নার মতো, একজন বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতির ‘দ্বন্দ্ব’ লুকানো নেই। উভয় পক্ষের 
একে অপরকে সারা বছর পরাজিত করুন। স্মৃতিতে ক্ষমতাসীন দলের কোন্দলও ‘পরিচিত’।

অন্যদিকে কাটোয়া বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ‘ভদ্রলোক’ হিসেবে পরিচিত। একসময়ের কংগ্রেসের জ্বালাময়ী নেতা রবীন্দ্রনাথ তৃণমূলে এসেও নিজের প্রভাব বজায় রেখেছেন। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, প্রতিবেশী বিধায়কের অনুগামীদের সঙ্গে বিধায়কের সম্পর্ক মোটেও মধুর নয়। দুই বিধায়কের মধ্যে দলীয় কোন্দলও স্থানীয় রাজনীতিতে সুপরিচিত। উপনির্বাচনে সে সব নিয়েই তোলপাড় হয়। এই বিবাদের প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য সেসবকে পাত্তা দেন না। বলেন, আমার সমাবেশ থেকে দল নেতৃত্ব পাবে।

গত বছরের পঞ্চায়েত ভোট কাঁটার মতো বিঁধছে। শাসক দলের রাজ্য স্তরের এক নেতা এ নিয়ে হাত কামড়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, “সবকিছু না করলেই ভালো হতো। অন্তত ভোট গণনা হাতে থাকত। এখন বিধানসভা ভোট গণনা নিয়ে এগোতে হবে। কিন্তু তিন বছরে কম জল। গঙ্গার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: সব খ্যাতি, সাফল্য ও প্রতিপত্তি মোদির জন্য! সেই ‘মোদীভক্ত’ই এবার বারাণসীতে মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী

 

রাজনৈতিক মহলের খবর, এই সব বিতর্ক এড়াতে ডক্টর শর্মিলা সরকারকে লোকসভার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে তৃণমূল। তার প্রচারণা, ভোট পরিকল্পনা সবই দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। রাজনীতির আঙিনায়ও নামছেন শর্মিলা। দলের ভেতরের কোন্দল কি তাকে সমস্যায় ফেলবে? শর্মিলা বিতর্কের অপরিচিত নন। তিনি বলেন, “বড় দলগুলোতে ব্যক্তিগত অনেক সমস্যা থাকে। তবে সবাই যার যার মতো করে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত।

সিপিএম প্রার্থী, শিক্ষক নীরব খানও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের এই নেতার প্রচারণায় রাজ্যের দুর্নীতির প্রসঙ্গও উঠছে। তিনি বিজেপির নির্বাচনী বন্ধনেও এগোবেন। এছাড়াও এই নির্বাচন পঞ্চায়েতে রায়না সহ বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে বাম নেতাদের আশার সঞ্চার করেছে। রায়নায় পার্টি অফিসে বসে বর্ধমানের কয়েকজন বাম নেতা বলছিলেন, ভোটারদের একাংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু সেই ভোট ফিরেছে পঞ্চায়েত ভোটে। সে কথা মাথায় রেখে তারা স্থানীয় পর্যায়ে কৃষি ও কৃষকদের সমস্যার কথাও বলছেন। তিনিও ফড়িংদের শক্তির কথা বলছেন, ন্যায্য দাম না পাওয়ার কথা। বামেদের আশা লোকসভায় তারা বেশি ভোট পাবে।

 

আরও পড়ুন: ‘নির্বাচনের সময় কেউ যদি আমাকে কলঙ্কিত করে…’, রাজ্যপালের বক্তব্য

 

তৃণমূলের নেতারাও আশাবাদী বামদের ভোট ফেরার ব্যাপারে। পরিসংখ্যান দেখায় যে 2014 সাল থেকে এই কেন্দ্রে বামেদের ভোট কমে যাওয়ায় বিজেপির ভোটও একই হারে বেড়েছে। 2019 সালের হিসাবে, তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ভোটের ব্যবধান 6 শতাংশ। তাই বামেরা ভোটে ফিরে জিততে পারলে পদ্মফুল অনেকটাই মসৃণ হবে।

রাজনীতির এই স্কেচি আলোচনার সাথে অন্য কিছুর পার্থক্য রয়েছে। সে সমস্যা মূলত ভোটারদের। বর্ধমান-পূর্ব লোকসভায় যেমন গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা, পূর্বস্থলীতে পানীয় জলে আর্সেনিকের সমস্যা, ক্ষয়প্রাপ্ত বস্ত্র শিল্পে বাসা বাঁধার সমস্যা। যদিও সে সব কথা এই লোকসভা কেন্দ্রে শোনা যাচ্ছে না।

 

আরও পড়ুন: হঠাৎ করে ভোটের হার বাড়ল কী করে? ফারাক্কার বৈঠক থেকে প্রশ্ন তোলেন মমতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *