Narendra Modi : ঈশ্বর চান আমি এই কাজটি করি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন

Narendra Modi : লোকসভা নির্বাচন চলছে। ঠিক কী মনে আছে নরেন্দ্র মোদির? তিনি কীভাবে দেখছেন গোটা পরিস্থিতি?

মোদিজি, নিউজ 18 নেটওয়ার্ককে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার ব্যস্ত সূচি থেকে সময় বের করে আমাদের দিয়েছেন। আমরা এই সাক্ষাৎকারটা একটু অন্যভাবে করব। শুরুতে আমরা কিছু বড় ঘটনা সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাইব। আমার সঙ্গে রয়েছেন, আমার দুই সহকর্মী নিউজ 18 লোকমতের সঞ্চালক বিলাস বড়ে এবং নিউজ 18 কন্নড়ের সম্পাদক হরিপ্রসাদ। এবারের লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, তাই আমরা ঠিক করেছি, তাঁরাও যাতে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: (Narendra Modi) আপনাকে এবং আপনার দর্শকদের নমস্কার। আপনার সঙ্গে কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রের সাক্ষাৎকারীরা আছে দেখে আমি খুশি। একদিক থেকে আপনি আমাকেই সাহায্যই করেছেন, না হলে আমাকে আলাদা আলাদা তিনটি সাক্ষাৎকারের জন্য আরও বেশি সময় দিতে হত।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি (Narendra Modi) আমরা সারা দেশ ঘুরেছি। দক্ষিণে গিয়েছি, বিহারে ছিলাম আবার মহারাষ্ট্রেও। আমরা বিরোধী দল হোক কিংবা আপনার প্রার্থী, যার সঙ্গেই কথা বলি না কেন, তাঁরা বলেন, “মোদিজি যখন এখানে আসবেন, সব বদলে যাবে”। তাঁরা বলছেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। মোদিজি এখানে এলে হাওয়া ঘুরে যাবে, সব আসনই দখলে আসতে পারে। তাহলে কি ২০২৪-এর নির্বাচন মোদিজির জন্য গণভোট হিসেবে দেখা যায়?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: কখন এবং কী ভাবে তাঁরা কোনও বিষয়ের বিশ্লেষণ করবে, এটা সম্পূর্ণ মিডিয়ার উপর নির্ভর করছে। আমি শুধু এটুকুই বলব, নির্বাচন চলাকালীন আমি সরকার পরিচালনা করি না। আমার ১০ বছরের রেকর্ড দেখুন, গড়ে শুক্র, শনি এবং রবিবার দেশের কোথাও না কোথাও গিয়েছি। আমি মানুষের মধ্যে ছিলাম, সেই কারণেই সফর চলছে। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব, তাই যতটা সম্ভব জনগণের মধ্যে যাওয়া সব রাজনৈতিক দলের কর্তব্য। তাঁদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় যোগ দেওয়া উচিত। নির্বাচন থাকুক আর নাই থাকুক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মী হিসেবে জনগণের সঙ্গে দেখা করাকে আমি আমার কর্তব্য মনে করি।

দুই দফার নির্বাচনের কথা বললে, আমি খুব কম ভোটেই এমন জনসমর্থন দেখেছি। একদিক থেকে দেখলে সাধারণ মানুষ এবারের ভোটে লড়ছে। তাঁরা সুশাসনের জন্য লড়াই করছে। আমার মনে হয় আমি হয়ত মাধ্যম। তাই এবার মানুষের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আমি বেশি উৎসাহী কারণ মানুষ যখন এত বড় দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন তাঁদের কাছে মাথা নত করে আশীর্বাদ চাওয়াটা আমার কর্তব্য বলে মনে হয়। প্রথম দফা নির্বাচনের পর কয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলাম, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিল তাঁরা শেষ। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে মানুষ। প্রথমে মানুষ তাঁদের ধ্বংস করেছে, এখন নিজেরাই নিজেদের শেষ করছে তারা।

প্রশ্ন (রাহুল জোশি): মোদিজি আপনি উচ্চ স্তরে গ্রামে প্রচার শুরু করেছেন। সরকারের কাজের খতিয়ান পেশ করছেন। উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরছেন, এর উপর অনেক কাজও হয়েছে। কিন্তু দু’দফার পর আপনি রাজস্থানের জনসভা থেকে কংগ্রেসকে ইস্তেহার নিয়ে আক্রমণ করলেন। আপনি এও বলছেন যে, ওরা একটা স্কিমের মাধ্যমে সম্পদের পুনর্বন্টন করতে চায়। তারা জানতে চায় কার কত সঞ্চয় আছে, কার কত টাকা আছে, কার কাছে কত সোনা, রুপো আছে এবং তারা সেই সম্পদ মুসলমান ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চায়। এই হুমকির কি আদৌ বাস্তবতা আছে? আপনি কী এটাকে এভাবেই দেখছেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi): আমার মনে হচ্ছে, আপনার টিম হয়তো আমার পুরো প্রচার কভার করেনি। অনেক ভাল উন্নয়নমূলক জিনিস রয়েছে যা থেকে হয়ত ভাল টিআরপি আসে না। যাই হোক, আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, আমার পুরো নির্বাচনী প্রচার দুটো জিনিসের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক, আমরা সমাজের কল্যাণে কাজ করেছি। এই সরকারের সবচেয়ে বড় পার্থক্য (আগেরগুলোর তুলনায়) শেষ মাইল ডেলিভারি। এটাই আমাদের বিশেষত্ব। দেখুন, খারাপ কাজের জন্য কোনও সরকার তৈরি হয় না। সবাই ভাল করতে চায়। কিছু মানুষ জানে কী ভাবে অন্যের ভাল করতে হয়। কিছু মানুষ ভাল কিছু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। আমি এমন একজন মানুষ যে কঠোর পরিশ্রম এবং কাজে বিশ্বাসী।

এখন দেখুন, নির্বাচনে আমি একটানা বলছি, আমরা গরিব মানুষের জন্য চার কোটি বাড়ি তৈরি করেছি। অনেককে বলেছি, আপনারা যখন নির্বাচনী প্রচারে যাবেন, যাঁরা বাড়ি পায়নি তাঁদের তালিকা করে আমাদের পাঠান। আমার তৃতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আরও তিন কোটি বাড়ি বানাতে চাই। এখন, আয়ুষ্মান ভারত যোজনা হল বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বীমা এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ প্রকল্প। ৫৫ কোটি মানুষের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেয়, যে মোদির সরকার আপনার পাশে আছে। এ বারের ইস্তেহারে আমরা বলেছি, যে কোনও ব্যক্তি, তিনি যে শ্রেণি, বা সমাজ বা যে পটভূমি থেকেই আসুন না কেন, বয়স ৭০ বছরের বেশি – পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই – ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। আশা কর্মীদেরও এই সুবিধা দেওয়ার কথা ইস্তেহারে বলেছি আমরা। ট্রান্সজেন্ডাররাও এই সুবিধা পাবেন, বয়স যাই হোক না কেন।

এখন আপনারা দেখছেন, দেশের ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং তারা আত্মসাতের খেলা খেলছে। অতীতেও এমনটা হয়েছে। একটা সময় সব ব্যাঙ্কই বেসরকারি ছিল। তারা লুটপাঠ চালিয়েছে, গরিবদের টাকা নিয়ে নিয়েছে। আমাদের দেশের ব্যাঙ্কগুলোর শোচনীয় অবস্থা ছিল। দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে টাকা দিয়েছে, কিন্তু ব্যাঙ্ক তাঁদের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেনি। এরপর মোদি এসে ৫২ কোটি অ্যাকাউন্ট খুলল। সত্যি কথা বলতে, আমিই এর সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছি। জন ধন, মোবাইল এবং আধার, এই তিনটি বিষয়কে এক সুতোয় বেঁধে সরকারি প্রকল্পের টাকা সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। ৩৬ লক্ষ কোটি টাকা… সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। আমাদের দেশে এই বিশাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে (অ্যাকাউন্ট খোলার কারণে)। এই সংখ্যাটা এক বছরে বিশ্বে যত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে জলজীবন মিশন প্রকল্প চলছে। ভারতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ গ্রামে মানুষের বাড়িতে কলের জল পৌঁছে যাচ্ছে, শহুরে এলাকাযতেও। আজ ১৪ কোটি গ্রামীণ পরিবারে কলের জল পাচ্ছেন।

এই সমস্ত কাজই ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায়ণ করেছি, এবং আমার কৌশল হল, দরিদ্রদের এত শক্তি, এতটা শক্তি দাও যাতে তাঁরা নিজেরাই দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে পারে। আর দরিদ্ররা যখন কঠোর পরিশ্রমে দারিদ্র্যকে জয় করে, তখন তাঁরা দারিদ্র্যের মধ্যে ফিরতে চান না। এটা একটা অঙ্গীকার। তাঁরা দেশের শক্তিতে পরিণত হয়। আজ ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে আমরা উপকৃত হচ্ছি। এটি একটি খুব বড় অর্জন, গোটা বিশ্ব এর প্রশংসা করছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এটা মডেল হয়ে উঠবে।

আপনি নিশ্চয় দেখেছেন, ২০১৪ সালের আগে দেশের কী অবস্থা ছিল? ‘ফ্র্যাজাইল ৫’ শিরোনাম হত। আজ আমরা প্রাণবন্ত অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছি। আইএমএফ-এর বিশ্বের ১৫০টি দেশের একটি গ্রুপ রয়েছে – এর মধ্যে রয়েছে ভারত এবং চিন। যাকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ বা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বলতে পারি। ওঁরা এই সমস্ত দেশগুলিকে একটা গোষ্ঠীতে বিশ্লেষণ চালিয়েছে। খুব আকর্ষণীয় বিষয়।

বিশ্লেষণ থেকে কী পাওয়া গেল দেখুন। ১৯৯৮ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ, পিয়ার গ্রুপের অন্যদের তুলনায়। সেই সময় কেন্দ্রে অটলজির সরকার। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত, অটলজি এই সংখ্যাটাকে ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে নিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্দান্ত অগ্রগতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০৪ সালে এই খিচড়ি কোম্পানি আসে এবং অটলজির কাজে জল ঢেলে দেয়। তারা সংখ্যাটাকে ৩৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনে। অন্যান্য দেশ [পিয়ার গ্রুপে] ভারতের চেয়ে ভাল পারফর্ম করেছে। ইউপিএ জমানায় উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়, আমাদের চেয়ে যারা গরিব ছিল তারা এগিয়ে যায়।

২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর ২০১৯ পর্যন্ত, আপনি জেনে খুশি হবেন যে আমরা এই সংখ্যাটি ৩৭ শতাংশে নিয়ে গিয়েছি, এবং ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। অর্থাৎ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের আয় খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। দশ বছরের মূল্যস্ফীতির হারের কথা বললে, সেটাও এই দশ বছরে সর্বনিম্ন। যা বলছি বাস্তবতার ভিত্তিতে বলছি। অনেক পরিশ্রমের পর আমরা এই অর্জন করেছি। আমরা পুরো সরকারকে একত্রিত করেছি এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। তা সত্ত্বেও মোদি কী বলছেন? মোদি বলেছেন এটা শুধু ট্রেলার, আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। দেশকে সঙ্গে নিয়ে খুব দ্রুত এগোতে হবে।

কংগ্রেসের ইস্তেহারের ব্যাপারে বলা যাক। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্তেহার কী নিছক শো-পিস? প্রতিটা রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার পড়াই মিডিয়ার কাজ। এই বিষয়ে মিডিয়া কী বলে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। প্রথম দিনেই ইস্তেহার দেখে মন্তব্য করেছিলাম। আমার মনে হয়েছে এতে মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে। ভেবেছিলাম মিডিয়া অবাক হয়ে যাবে। যাঁরা বিশ্লেষণ করবেন, তাঁরা হতবাক হয়ে পড়বেন… কিন্তু কংগ্রেস যা দেখিয়েছে, ওঁরা সেটাই বলে চলেছে। আমার মনে হল, এভাবে চললে দেশের রাজনৈতিক ইকোসিস্টেমে কেলেঙ্কারি হতে পারে। তাই আমাকেই সত্যিটা সামনে আনতে হল। আমি ১০ দিন অপেক্ষা করেছিলাম যে ইস্তেহারের মন্দ দিকগুলো কেউ নিরপেক্ষভাবে কিছু বলবে। সেটাই ভাল হত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমাকেই সত্যিটা সামনে আনতে হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *