West Bengal Tab Scam: পশ্চিমবঙ্গ ট্যাব কেলেঙ্কারি
West Bengal Tab Scam: রাজ্যের ১৫ জেলায় ট্যাব কেলেঙ্কারি! কিন্তু আঁতুরঘর চোপড়া এবং গ্যাংয়ের প্রধান এক ব্যক্তি বলে জানিয়েছে লালবাজার
West Bengal Tab Scam: সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ট্যাব মামলায় এবার ‘দুর্নীতির’ শিকার রাজ্য সরকার! এখনও পর্যন্ত, ট্যাব কেলেঙ্কারি রাজ্যের অন্তত 15টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার ট্যাব কেলেঙ্কারিতে ‘দুর্নীতির’ শিকার রাজ্য সরকার! এখনও পর্যন্ত, ট্যাব কেলেঙ্কারি রাজ্যের অন্তত 15টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রাজ্যের বরাদ্দ লক্ষ লক্ষ টাকা সাইবার অপরাধীদের হাতে পৌঁছেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর কলকাতায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করে কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক অনুমান উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ও তার আশেপাশের এলাকায় ট্যাব জালিয়াতির চক্র রয়েছে। শুধু তাই নয়, আপাতত লালবাজারের তদন্তকারীরা মনে করছেন, পুরো বলয়ের প্রধান একজনই।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “এখন পর্যন্ত 10 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতীয় তথ্যবিজ্ঞান কেন্দ্র ইতিমধ্যেই পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছে এবং আমাদের কাছে একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) জমা দিয়েছে। যেভাবে প্রশ্নপত্র মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বের হতে বাধা দেওয়া হয়েছে, এই সমস্যাটিও পুরোপুরি সমাধান করা হবে।”
আরো পড়ুন: বাংলাদেশি হিন্দুদের সম্পর্কে ভারতের কিছু বলার দরকার নেই’, বলেছেন ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা
রাজ্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে ট্যাবলেট কেনার জন্য একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের 10,000 টাকা দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে 2021 সালে এই প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে এই টাকা দেওয়া হতো শুধু দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। এ বছর একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ট্যাবলেট কেনার জন্যও টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিয়ম হল, স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের নামের তালিকা তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ শিক্ষা দফতরে পাঠাবে।
ট্যাবলেটের টাকা একইভাবে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এ বছর অনেক শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করে দেখা গেছে তাদের টাকা অন্য কারো অ্যাকাউন্টে গেছে। তদন্তের সময়, তদন্তকারীরা সাইবার অপরাধীদের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পেয়েছেন।
আরো পড়ুন: আমার স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক নাতনি…’, বিতর্কের মধ্যে সাফাই ফিরহাদার
ট্যাব কেলেঙ্কারির প্রথম অভিযোগ উঠেছিল পূর্ব বর্ধমানে। ধীরে ধীরে অন্যান্য জেলায়ও একই অভিযোগ আসতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দেখা গেছে, ১৫টি জেলার মোট ১৯৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্যাব কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন। বাকি আটটি জেলা থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। তবে প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের মতে, ট্যাব কেলেঙ্কারি যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে ওই আটটি জেলাও তালিকায় যুক্ত হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে যে তারা জানতে পেরেছে যে এখনও পর্যন্ত 781 জন শিক্ষার্থী ট্যাব কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছে। তবে, জেলাভিত্তিক, দেখা যাচ্ছে যে রাজ্যের 1,352 জন শিক্ষার্থী এখনও তাদের ট্যাবের টাকা পাননি। ট্যাব কেলেঙ্কারিতে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছাত্ররা। সেখানে ৪৯টি স্কুলের ৩৫০ শিক্ষার্থী ট্যাবের টাকা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুরেও 38টি স্কুলের 240 জন শিক্ষার্থী তাদের ট্যাবের টাকা পায়নি। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ১০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নয়টি স্কুলের মোট 107 জন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছে।
আরো পড়ুন: পার্থ চট্টোপাধ্যায় মামলা, রাজি হয়ে গেল ৩ জন, পার্থ চট্টোধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী হচ্ছেন!নাম জানলে চমকে উঠবেন
তদন্তে নেমে লালবাজার জানতে পেরেছে, যে সব অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেলেঙ্কারির টাকা জমা হয়েছে সেগুলিই ভাড়ার অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্টগুলি 300 থেকে কমপক্ষে 5,000 টাকা ফি দিয়ে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে টাকা তুলে নেওয়া হয়। তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, টাকা তোলার আগেই কিছু অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয়েছিল। কিছু অ্যাকাউন্টও ‘ফ্রোজ’ করা হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, ভাড়ার খাতার মালিকরা মূলত উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। সেই সূত্র ধরেই উঠে এসেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার নাম। তদন্তকারীদের মতে, চোপড়া পুরো গ্যাংয়ের রিংলিডার। ইতিমধ্যেই সেখান থেকে চারজনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে। লালবাজার আরও ছয়জনকে খুঁজছে। তারা পলাতক। সিট গঠন করে ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। মালদা জেলা পুলিশও একটি আসন গঠন করেছে।
ট্যাব-কাণ্ডে কী করছে রাজ্য সরকার
ট্যাব কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা দফতরের ভূমিকা নিয়েও। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ট্যাব জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাজ্য জুড়ে ইতিমধ্যেই ১০ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রামে হিন্দুদের বাড়িতে বাহিনীর জোরপূর্বক হামলার অভিযোগ, বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের কাছে ভারতের কড়া বার্তা
পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘যে সব পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি, তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে আবার টাকা দেওয়া হয়েছে ট্যাব কেনার জন্য।’’ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, হয়রানির শিকার হওয়া বাকি পড়ুয়াদেরও ট্যাব কেনার টাকা দিয়ে দেওয়া হবে, ‘উধাও’ হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার হওয়ার আগেই। শুধু তা-ই নয়, এ বার থেকে ট্যাব প্রকল্পে অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্মীর ভান্ডারকে ‘মডেল’ হিসাবে অনুসরণ করার পরামর্শও শিক্ষা দফতরকে দিয়েছে নবান্ন।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার মুখ্যসচিবের বৈঠকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে শিক্ষা দফতরকে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে ট্যাবের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে একটিও বেনিয়মের ঘটনা না ঘটে, সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ, প্রত্যেক প্রকল্পের অর্থ দেওয়ার উপর রাজ্য সরকারের ‘ভাবমূর্তি’ নির্ভর করে। সেই প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ থাকা জরুরি। কোনও প্রকল্পের অর্থ খরচে বেনিয়ম পাওয়া গেলে তার দায় বহন করতে হয় রাজ্য সরকারকেই।
আরো পড়ুন: উত্তরের বাতাস বইছে, তাপমাত্রা ক্রমশ কমবে, রাজ্যে কোথায় নামবে পারদ? খুঁজে বের করুন
তাই এ ক্ষেত্রে আরও সচেতন থাকতে হবে। নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকেরা জেনেছেন, ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার জন্য ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত করতে হয় স্কুলগুলিকে। যে সব স্কুলে একাদশ-দ্বাদশে বৃত্তিমূলক কোর্স পড়ানো হয়, সেখানে ‘তরুণের স্বপ্ন’ নামে পৃথক একটি পোর্টালেও নাম নথিভুক্ত করা যায়। ছাত্রছাত্রীদের নাম, ব্যাঙ্কের নাম, শাখা, আইএফএসসি কোড ও অ্যাকাউন্ট নম্বর পোর্টালে দিয়ে নথিবদ্ধকরণ করতে হয়। সেখানে আধার কার্ড নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা নেই।
ছাত্রছাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আধার সংযুক্তিকরণ না থাকাতেই অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে টাকা দেওয়ার সময় এমন সমস্যা হয় না। সেই সূত্রেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটিকে ‘মডেল’ হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে হেতু নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটি পরিচালনা করে, তাই অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গেও আলোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরকে।
আরো পড়ুন: এই 4টি রাশির চিহ্নের পরের বছর তাদের জীবনে প্রেম উপচে পড়বে, আপনি বিশুদ্ধ ভালবাসার স্পর্শ পাবেন
কোথায় হয়েছে গোলমাল?
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ট্যাব কেলেঙ্কারি হয়েছে মূলত বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকে। পড়ুয়াদের নাম-ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের তালিকা বাংলা শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করতে হয় স্কুলগুলিকে। মূলত সাইবার ক্যাফে থেকেই সেই কাজ করে বহু স্কুল। গোলমাল সেখানেই হয়েছে। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, পোর্টালে তথ্য আপলোড করার কাজ অনেক সময় প্রধানশিক্ষকেরা নিজেই করেন। আবার অন্য কাউকেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। তার কাছে থাকে প্রয়োজনীয় ‘লগ-ইন ক্রিডেনশিয়ালস’ (ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড)। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রথমে বাংলা শিক্ষা পোর্টালের তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে লগ ইন করার জন্য একটি জেনারেল পাসওয়ার্ড-আইডি দেওয়া হয়।
সমস্ত স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই আইডি-পাসওয়ার্ড যাতে পরে তাঁরা বদলে দেন। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, বহু স্কুল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন না করে সেই পুরনো একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই পোর্টালে লগ ইন করে। সেখানেই পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য বদলে দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেই কাজ করেছে সাইবার ক্যাফের লোকেরা।’’ অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক চন্দন মাইতির বক্তব্য, ‘‘পুরো কাজটি অনলাইনের মাধ্যমে করতে হয়।
আরো পড়ুন: দেখুন আজ আপনার প্রেমের জীবন কেমন যাবে; জানালেন জ্যোতিষী চিরাগ দারুওয়ালা
বহু স্কুলে এই কাজ করার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বা পরিকাঠামো নেই। বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হয় সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে। বহু সময় বাংলার শিক্ষা পোর্টালের সার্ভার ডাউন থাকায় সেখানেই কাজটি বন্ধ রেখে চলে আসতে হয়। আর সেখান থেকেই তথ্য পাচার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’’
কেলেঙ্কারি বাইরের রাজ্যেও?
ট্যাব কেলেঙ্কারিতে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগ থাকতে পারে বলেও দাবি করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেছেন, ‘‘যেভাবে রাজ্য সরকারি স্কিমের টাকা বিহারের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে, তাতে এর সঙ্গে জামতাড়া গ্যাংয়ের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, পুলিশ-প্রশাসন খতিয়ে দেখছে।’’ পুলিশ সূত্রেও খবর, ট্যাব জালিয়াতির জন্য ভিন্রাজ্যের সাইবার প্রতারকদেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। সেই ভিন্রাজ্যের ব্যাঙ্কেও ট্যাবের টাকা গিয়েছে, বিহারের কিষানগঞ্জ থেকে মধ্যপ্রদেশের রায়পুর-সহ একাধিক শহরে এই চক্র ছড়িয়ে রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের একাংশের।
আরো পড়ুন: মোদি বিশ্বনেতা হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য প্রার্থী..! বললেন মার্ক মোবিয়াস